ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলা ছাড়া সব মামলায় জামিনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। তার আইনজীবীরা আরও জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর আদালত আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে বিচারাধীন কাজ সমাপ্ত করতে চেয়েছেন। ফলে দ্রুত সময়ে মধ্যে সাব্বির হত্যা মামলা রায় ঘোষণা সম্ভবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি মাসেই জাকির খান বেকসুর খালাস পাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তার আইনজীবীরা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল ইসলামের আদালতে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় স্বাক্ষীগ্রহণে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে হাজির করা হয়। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় জাকির খানকে। পরে আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে ফের কারগারে পাঠানো হয়। এ সময় জাকির খানের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে আদালপাড়ায় জড়ো হয়। এর আগে সাব্বির হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন ৯ নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল আফছার।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, ১০ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা মধ্যে ৯ নম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল আফছার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। উনি দুটি পত্রিকার রিপোর্ট সহ কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ১৬১ ধারায় ৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন তিনি। আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে ৬ মাসের মধ্যে আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। সেই ৬ মাসের মেয়াদ আগামী ২৫ তারিখ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এই সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবেন বলে আদালতের বিচারক জানিয়েছেন। সে হিসেবে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন এই মামলার তারিখ হবে, প্রতিদিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল আফছার শুধুমাত্র কিছু কাগজপত্র জব্দসহ পত্রিকার রিপোর্টের কাটিং দেখিয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনার সময় জাকির খান দেশের বাইরে ছিল বলে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। এই মামলার সাথে যেসব কাগজপত্রের সম্পৃক্ততা নেই সেসব তিনি দেখিয়েছেন। এছাড়া উনার সাক্ষীও যথাযথ হয়নি। তিনি ছাড়া এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউ জাকির খানের বিরুদ্ধে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই মামলার কার্যক্রম প্রতিদিন চলবে। আপনারা এরকম মামলা কবে দেখেছেন যে মামলার কার্যক্রম প্রতিদিন চলে। এটা একটা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হলেও এর সাথে আসামি জাকির খান কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। তার সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আদালত এই মামলা ৬ মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সময় শেষ হবে আগামী ২৫ নভেম্বর। অর্থাৎ আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।
স্বাক্ষী শেষে সাংবাদিকদের শেষে ব্রিফিংয়ে জাকির খানের আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বলেছেন, আমরা এ মাসেই জাকির খানকে বের করব। জাকির খান খালাস পেয়ে নির্দোষ হয়ে বের হবেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন তিনি মামলার সঠিক তদন্ত করে আনতে পারেননি। আসামি সেসময় দেশের বাইরে ছিল এটাত তিনি বলেছেন। তদন্তের সময়ও তিনি বাইরে ছিলেন। এ মামলায় আমাদের কিছু হবে না। যিনি এ মামলা করেছেন তিনি উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এ মামলা করেছেন এটাও প্রমান হয়ে গেছে।
এর আগে জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজিব মন্ডল বলেছেন, ১৮ নম্বর স্বাক্ষী হিসেবে ৯নং তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল আশফাক আদালতে স্বাক্ষী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার তদন্তকালে জাকির খান দেশে ছিলেন না। বেশি ভাগ স্বাক্ষী বলেছেন হত্যা সময়ে জাকির খানকে দেখেনি। অন্যদিকে নিহত সাব্বিরের পরিবার ছাড়া জাকির খান জড়িত এমন কেউ স্বাক্ষী দেয়নি আদালতে। উচ্চ আদালতে জাকির খানের জামিনের আবেদন করা হয়। ওই সময় আদালত আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করার নিদের্শ দেয়া হয়। তার অনুযায়ী আগামী ২৫ নভেম্বর হয়, আজকে আদালত ২৬ নভেম্বর মধ্যে বিচারের কাজ শেষ করতে চান। ইতোমধ্যে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও আইনজীবীদের পরামর্শে প্রতিদিন জাকির খানকে আদালতে এনে স্বাক্ষীর কাজ শেষ করতে নিদের্শ দিয়েছেন। ফলে আজ মঙ্গলবার থেকে তিদিন তাকে আদালতে আনা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেছেন, আমাদের আর অল্প সময় বাকি। আজ জাকির খান সাহেব নারায়ণগঞ্জে। যারা ষরযন্ত্র করেছিল, জাকির খানকে রাজনৈতিক ভাবে উৎখাত করতে চেয়েছিল তারা আজ কোথায়? তারা বাংলাদেশের মাটিতে নেই। তারা পালিয়ে গিয়েছে। আজ যে জাকির খানকে নিচে নামাতে চেয়েছে তিনি নিজেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। জাকির খান সকল মামলায় জামিনে আছেন। এই মামলার জামিন হলেই জাকির খান মুক্তি পাবে। আজকে আলাদতপাড়া থেকে খান ভিলা মাত্র এক কিলোমিটার। ২৬ তারিখ আমরা খান ভিলায় তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবো।
এদিকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের মুক্তির দাবিতে সকাল থেকে আদালত পাড়ায় হাজার হাজার নেতাকর্মীদের ভীরে তীল ধারনের জায়গা ছিলো না। দলে দলে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা। এসময় নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা আদালতপাড়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মনির খান, আওলাদ হোসেন, ‘জাকির খান মুক্তি পরিষদ’র আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ্ করিম সেলিম, একই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ আহমেদ, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন খান, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি এইচএম হোসেন, জাকির খান মুক্তি পরিষদ নেতা আমিনুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, মহানগর শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: মন্টু, জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক দলের সভাপতি কাউসার আহমেদ, মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মীর মোহাম্মদ রাজীব, জেলা জাসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: জাকির আহমেদ, সদর থানা গার্মেন্টস শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সালেহ আহমেদ রনি, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাঞ্চন আহমেদ, আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মো: শামীম, গণপরিষদ নেতা কামাল হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী দলের সিনিয়র সহ সভাপতি মুন্সী মো শাহজালাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আল আমিন হৃদয়, সহ সভাপতি আজিজুল হক, দপ্তর সম্পাদক আদনান ইব্রাহিম, শাহাদাত হোসেন সানু, সদর থানা গার্মেন্টস শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: খোকন, মো: সুমন, সদর থানা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী সোহেল, ফতুল্লা থানা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি সলিমুল্লাহ হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়সাল বেপারী, সহ সভাপতি সোহাগ রাজ, বন্দর উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মো হাসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মো রুবেল, শুক্কুর আলী বেপারী, মো: কালাম, মো: কাইয়ূম, আড়াইহাজার উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মো: শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো: কাউসার ভূঁইয়া ও সোনারগাঁও উপজেলা মৎস্যজীবী দলের নেতৃবৃন্দরা সহধীক নেতাকর্মী।