চলছিলো বিএনপির চরম দুর্দিন। তবুও নারায়ণগঞ্জের সড়কে বার বার জ্বলে উঠছিলো আগুন। পুলিশ বাহিনীর কড়া এ্যাকশনে মাঠে ঠিকমত দাঁড়াতেই পারছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির ব্যানার দেখলেই ক্ষেপে যেতেন তারা। চালাতেন হামলা, গ্রেফতার করে নিয়ে যেতেন নেতাকর্মীদের। এর মধ্যেই চলছিলো বিএনপির লাগাতার হরতাল ও অবরোধ। দলের এ দু:সময়েও অনেক শীর্ষ নেতাদের শুধু ফটোসেশন করেই মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ গোপনে আঁতাঁত করেছেন সরকারি দলের সাথে। তবে একটা পক্ষ ছিলো যাদেরকে প্রাণঝুঁকি নিয়েও সেদিন মাঠে থাকতে দেখা গেছে। লাভ-ক্ষতির হিসেব তারা সেদিন করেন নি। শুধুমাত্র সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে ভালোবেসে রাজপথে পুলিশের বুলেটের সামনে বুকপেতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ করে হরতাল-অবরোধগুলোকে অনেকাংশে সফল করে তোলেছিলেন। সেইসব ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের মধ্যে মহানগর যুবদল নেতা আক্তার অপু ছিলেন অন্যতম।
যিনি রাজনীতি করতে গিয়ে বহুবার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। হুমকি ছিলো প্রাণে মেরে ফেলার কিংবা গুম করে ফেলারও। কিন্তু তবুও মাথা নতো করেন নি তিনি। বরং আরও সাহসীকতার সাথে মাঠে সক্রিয় থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তোলেছেন। পুলিশের বুলেটের সামনে হাসিনা বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন, কখনো মৃত্যুকে ভয় করেন নি। তাছাড়া বিনিময়ে দল থেকে কিছুই চান নি। শুধু নি:স্বার্থভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে দলের জন্য নিরলশভাবে কাজ করে গেছেন।
কিন্তু বড় দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, ৫ আগস্টের পর যেন ধরে ধরে এসমস্ত ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। উদ্দেশ্য হলো ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থেকে যারা মাঠে কাঁপন ধরিয়েছিলেন তাদেরকে আজ ফ্যাসিস্টদের দোসর বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আক্তার অপু তাদেরই মধ্যে একজন। যুবদলের সামান্য একজন কর্মী হয়ে বিগত সময়ে রাজপথে সক্রিয় থেকে যে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তা স্বীকারতো দূরের কথা উল্টো তাকে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলরের সহযোগী বানানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এটা সত্যিই দু:খজনক।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিম বাবুর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা আক্তার। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং কাউন্সিলর হওয়ায় বাবুর কার্যালয়ে তার যাতায়াত থাকতেই পারে এবং তার সাথে কথাবার্তা হওয়াটাও একদমই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এটাকে রং লাগিয়ে মানুষের সামনে অন্যভাবে উপস্থাপন করাটা সত্যিই রহস্যের। জানা যাচ্ছে না, এতে কার লাভ আর কার ক্ষতি? তবে এটা স্পষ্ট এসমস্ত ত্যাগী নেতাদের মাইনাসে দলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে। বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যে ভুল করে গেছে তারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে। ফ্যাসিস্টদের ভুলের পরিনতিতো দেখলো সারা দেশ এমনকি বিশ্ববাসীও। এখন কি তাহলে নিজ দলের ক্ষতি দেখার জন্যই এমন করছে দলীয় নেতাকর্মীরা, নাকি এর পেছনেও ইন্ধন রয়েছে ফ্যাসিস্টদের? বিএনপি নেতাদের এটা খোঁজে বের করা খুব জরুরী। নয়তো, এর কড়া মাসুল দিতে হতে পারে দলকে।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা আক্তার বলেন, কিছু পাওয়ার জন্য কিংবা পদ পদবীর আশায় কখনো রাজনীতি করি নি। শুধুমাত্র শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ভালোবেসে বিএনপি করি। এতে দল যদি মূল্যায়ন করে ভালো, আর যদি মূল্যায়ন না করে কোন সমস্যা নাই। বিএনপি করি, করেই যাবো। যারা আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, জানিনা তারা দলকে কতটা ভালোবাসেন। দলকে যদি সত্যিই ভালোবাসতেন তাহলে এ ধরনের অপপ্রচারের আগে দলকের ভাবমুর্তির বিষয়টা একটু খেয়াল করতেন। আমি দীর্ঘ বহুবছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপি করতে গিয়ে বহু হামলা মামলার শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন বাড়ীতে থাকতে পারেনি। এত ত্যাগ শিকার করার পরও যদি কেউ আমাদের নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে, তাহলে কিচ্ছু বলার নাই। শুধু বলবো, আল্লাহ্ আপনাদের হেদায়েত দান করুক।