৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের পর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে দলটি। এরপর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করার পর পরই ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া গণহত্যার অভিযোগে মামলা-গ্রেফতার ও সাধারণ জনগণের ক্ষোভের কারণে দৃশ্যত দলটির কোনো কার্যক্রম নেই।
এমতাবস্থায় নানা ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে চেষ্টা করছে। এতদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা কার্যক্রম চোঁখে পড়লেও এবার তার রেশ দেখা গেলো বাস্তবে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল ফটক, সরকারি তোলারাম কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজগেটসহ বিভিন্নস্থানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানোর বিষয়টিই সেই বাস্তবতার প্রমাণ। বুধবার (২২ জানুয়ারী) দিবাগত রাতে ওই পোস্টারগুলো সাটানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ছবিতে দেখা যায়, পোস্টারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানের ছবি রয়েছে। এতে লেখা আছে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। এদিকে এসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের নেতা সোহানুর রহমান শুভ্রকে। তিনি এসব ছবি প্রকাশ করে লিখেন, ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, নারায়ণগঞ্জ, এ শহর দেশরত্ন শেখ হাসিনার শহর। এ শহর জননেতা শামীম ওসমান, জনাব অয়ন ওসমানের শহর। জয় বাংলা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় ‘জনরোষের সৃষ্টি হতে চলেছে।’ যে কোন সময় সেই জনরোষ জনক্ষোভে পরিনত হতে পারে। ফলে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামার পর সেখানে জনসমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশা করছে ছাত্রলীগ। তাই তারা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আন্দোলনের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নস্থানে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছে বলে আমরা মনেকরি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, যেসব নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতারা এসব পোস্টার সাঁটিয়েছে তারা সবাই ওসমান পরিবারের অনুসারী। তাই তারা পোস্টারে শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমানের ছবি ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশেই নয় বরং তারা ওসমানদের নির্দেশেই এমন পোস্টার সাঁটিয়েছে বলে মনে করছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
নারায়ণগঞ্জবাসী বলছে, জুলাই-আগস্টে যারা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ভাইদের হত্যা করেছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলা হয়েছে। কিন্তু প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার কিংবা বিচারের আওতায় আনা হয়নি। যারফলে তারা এমন স্পর্ধা দেখানোর সাহস করছে। তাই প্রশাসনকে আর বসে থাকলে চলবে না। যতদ্রুত সম্ভব ছাত্রলীগসহ সকল আসামীকে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসাটাই হবে সকলের জন্য মঙ্গলজনক। নয়তো, তারা হয়তো আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে আসতে পারে।