ফুটপাত কিংবা মার্কেট। কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। সর্বত্র যেন কেনাকাটার ধুম। দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কিনতে আসা মানুষগুলোর উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
শহর ঘুরে সরেজমিনে দেখাগেছে, ফুটপাত ও মার্কেটগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার জন্য দুরদুরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে এসেছে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের দোকানে বেশি ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের ভীড়ের কারণে বেশিরভাগ দোকানে শীতবস্ত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শীতবস্ত্রের দাম যেমনই হোক দোকানগুলোতে কিন্তু ভীড় লেগে থাকতেই দেখা গেছে।
এদিকে ক্রেতাদের পছন্দের মত বস্ত্র দিতে হিমশিম খেতেও দেখা গেছে কোন কোন দোকানিকে। আবার একই বস্ত্র নিয়ে একাধীক ব্যক্তিদের মাঝে টানাটানির ঘটনাও ঘটছে।
শহরের গ্রীণলেজ ব্যাংকের মোড়ে ফুটপাতে ব্যবসা করেন ইমন নামে যুবক। তিনি শহরের বাসিন্দা হলেও এখন স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে বন্দরে থাকেন। তিনি জানালেন, ক্রেতাদের ভীড় অনেক বেশি। আগের তুলনায় বেচাবিক্রিও বেশি। তবে কিছু ক্রেতা আছে যারা বেশি দামদস্ত করে এবং মাল (বস্ত্র) বেশি নাড়াচারা করে। এদের কারণে অনেক কাস্টমার ছুটে যায়। এছাড়া আল্লাহ্’র রহমতে ভালোই আছি।
শহরের পাক্কারোড এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস। তিনি ফুটপাতে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করে আসছেন। শহরের ২নং রেলগেট চেম্বার রোডের মাথায় তার দোকান। তিনি বাচ্চাদের বস্ত্র বিক্রি করেন। তিনি বললেন, এবার বাচ্চাদের শীতবস্ত্রের দাম একটু বেশি হলেও আলহামদুল্লিাহ্ আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক ভালো হচ্ছে। ছোট ছোট মেয়ে বাচ্চাদের জন্য টুপিসহ জামা ও মোজার প্রতি কাস্টমারদের বেশি চাপ।
এদিকে শহরের টানবাজারস্থ রিভারভিউ কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকারদের উপচে পড়া ভীড়। তারা রীতিমত বেচাবিক্রি করে কোলাতে পারছেন না। কারো সাথে কথা বলারও টাইম নাই তাদের কাছে। শত শত ডজন বড়-ছোট ছেলে-মেয়েদের শীতবস্ত্রের জন্য লাইন ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা।
এ বিষয়ে রিভারভিউ মার্কেটের সোহেল নামে এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ভাবতে পারেনি বেচাকেনা এত বেশি হবে। ভাবছিলাম, দেশের যে অবস্থা মাল কিনে নাকি আবার ধরা খাই। কিন্তু ভুল করেছি। বেশি মাল স্টকে থাকলে আরও বেশি বেচতে পারতাম। যাইহোক এটা সত্য যে, আগের যেকোন সময়ের তুলনায় এবার শীতের বেচাকেনা অনেক বেশি।
এদিকে পোষাকের বৃহত্তর পাইকারি বাজার দেওভোগ মার্কেটে গিয়েও দেখা গেলো একই চিত্র। বড় বস্তবন্দি শীতবস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। মার্কেটের দোকানগুলোতে যেন ধম ফেলার সময় নাই। একাধীক ব্যক্তি নিয়োজিত ক্যাশমেমো লিখতে। আবার কেউ কেউ টাকা গুনায় ব্যস্ত। কারাখানাগুলোতেও বেড়েছে দিনভর ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে যেন একটা উৎসবের আমেজ।
এ বিষয়ে দেওভোগ মার্কেটের মালিক সমিতির এক কর্তা বলেন, গতবারে শীতের ব্যবসা তেমন একটা হয় নাই বলেই চলে। শীত কখন আসলো আর কখন গেলো, নারায়ণগঞ্জের মানুষ তা টেড়ই পায়নাই। কিন্তু এবার শুরু থেকেই শীত শীত ভাব লক্ষ্য করা গেছে। সামনে শীত আরও বাড়বে। সেই চিন্তাভাবনাই বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসছে শীতবস্ত্র নিতে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা এ মার্কেটে বেচাবিক্রি হচ্ছে। এবারের এ বেচাবিক্রিতে মার্কেটের সকল পাইকারি ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট। তারা এবার গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ইনশাআল্লাহ্, সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেও পারবেন বলে আমার মনে হয়।