তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতারা। তৈমূরের গ্রেফতার দাবি জানিয়ে তারা বলেছিলেন, তৈমূর আলম আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি রাতের আধারে শেখ হাসিনার সাথে হাত মিলিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার পেছনে তৈমূররাও সমানভাবে দায়ী। তারা আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মকে সার্পোট দিয়ে গেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চুপ থেকে এই তৈমূররা এসমস্ত খুনকেও এক প্রকার নিরবে সমর্থন দিয়ে গেছেন। কারণ, তারা চেয়েছিলো ছাত্র-জনতার হাজার হাজার লাশের বিনিময়ে হলেও টিকে থাকতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।
বিএনপি নেতারা এও বলেছিলেন, আজ কোথায় তৈমূর? ৫ আগস্টের পরে কেন আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা জেনেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর ওই কুখ্যাত ওসমানরা যখন নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলো, ওই ঘটনায় নাকি আপনিও জড়িত ছিলেন। আপনার বাড়ী থেকে ওই ওসমানদের অস্ত্র সরবহরাহ করা হয়েছে। আপনি পর্দার অন্তরালে থেকে ওই ওসমানদের ছাত্র-জনতাদের ওপর গুলি চালাতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ওসমানরা পালিয়েছে। আপনিও আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু কতদিন আর আত্মগোপনে থাকবেন। আপনার বিচার হবেই। কিছুদিন আগে আপনার দলের (তৃণমূল বিএনপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আরেক দোসর শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনিও গ্রেফতার হবেন। কোন ছাড় পাবেন না।
অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস আত্মগোপনে থাকার পর প্রকাশ্যে এসেছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপি নেতাদের সকল সমালোচনাকে দূরে ঠেলে গত ৫ নভেম্বর শহরের মাসদাইর এলাকায় বেগম রোকেয়া খন্দকার পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সাথে এত মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে প্রথম বারের মত প্রকাশ্যে আসেন তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি সূর পাল্টে বলেন, আমি আগেই বলেছি শেখ হাসিনা যদি ছাত্রদের কম্প্রমাইজ না করে তাহলে শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ছাত্রদের জয় হবে। শেখ হাসিনা যেদিন ছাত্রদের রাজাকার বলছে তখন থেকেই এই আন্দোলনে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শেখ হাসিনার পতনের অন্যতম কারণ মন্ত্রীদের অসংলগ্ন কথাবার্তা। এদেশের জনগণকে সরকার প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। প্রত্যেক জেলায় এমপি বানানো হয়েছে তারা সবগুলো লুটেরা ছিলো।
‘সংস্কার হতে হবে গণআলোচনার মাধ্যমে গণশুনানীর মাধ্যমে’ উল্লেখ করে তৈমূর আরও বলেন, দেশে এখন সংস্কারের কাজ চলছে। আমি রাজনীতি নিয়ে ভাবিনা। দেশের একটা সংস্কার হওয়া দরকার। তবে এই সংস্কার সর্ব বিষয়ে হওয়া দরকার। পূর্ববর্তী অবস্থায় দেশ পরিচালনা সিস্টেম একপেশী। যারা ক্ষমতায় তাদের সেবাদাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আমলারা এসপি ডিসি। অথচ সংবিধানে প্রজাতন্ত্রে সকল কর্মচারী দায়িত্ব হবে জনগণের সেবা করা। সংস্কার হতে হবে গণআলোচনার মাধ্যমে গণশুনানীর মাধ্যমে। আমি আগেই বলেছি তৃতীয় প্রজন্মের দ্বারাই সংস্কার হওয়ার দরকার। এই তৃতীয় প্রজন্মই হচ্ছে ছাত্রসমাজ। তারাই দেশ পরিচালনা করেছে।
এদিকে তৈমূরের হঠাৎ প্রকাশে আসার বিষয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, একটু ধৈর্য ধরুন। অনেক কিছুই দেখার বাকি আছে। শুধু এইটুকু বলি, আওয়ামী লীগের কোন দোসরদের ছাড় দেয়া হবেনা। তৈমূর বিএনপির সাথে বেঈমানি করে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাঁত করে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ওই নির্বাচনকে বৈধতাও দিয়েছিলো। কোন ছাড় দেয়া হবেনা। সকল ষড়যন্ত্রকারিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।