নারায়ণগঞ্জে ঈদের পর শহরের নাগরিক সমস্যা সমাধান বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ জেলার তিনজন প্রভাবশালী এমপি। আলোচনা থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও ঈদের পর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফের গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। গতকাল ৮ এপ্রিল (সোমবার) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বিকেএমইএ ভবনের মিলনায়তনে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জাতীয় সংসদের হুইপ এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমান।
বক্তব্যের শুরুতে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি নারায়ণগঞ্জের সমস্যা সমাধান করার জন্য। আমরা হকারদের বসার ব্যবস্থা করেছি, হলিডে মার্কেট করে দিয়েছি। তাদের কাছে দাবি ছিল, তারা কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো সড়কে যেতে পারবে না। তারা বসার পর আমাদের পুলিশ প্রশাসন সরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা আবারও বসে। আমাদের সময় দিতে হবে। আমরা যেই ঈদ মার্কেট করে দিয়েছি সেটা আগামী কোরবানী ঈদ পর্যন্ত এখানে থাকবে। তাদের নিয়ে আমরা নতুন চিন্তাভাবনার চেষ্টা করছি। যতটা সহযোগীত আশা করেছিলাম ততটা পাইনি। আমি কাউকে দোষী করবো না। মেয়রকে অনুরোধ করবো, সিটি করপোরেশনের অডিটরিয়ামে ঈদের পরে একটি আলোচনা সভা করে পরবর্তীতে কীভাবে এই শহরকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো যায়।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু ফান্ডেরও প্রয়োজন আছে। আমরা চেষ্টা করেছি, পুরোপুরি সফল হইনি। আমাদের প্ল্যানিং এগোতে থাকুক, নারায়ণগঞ্জের আরও অনেক কাজ রয়েছে। আমরা একসঙ্গে সবগুলো কাজ করবো।’
এমপি শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যানজট ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। সমস্যা অনেক আছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পুলিশ প্রশাসনকে দিয়েছে যানজট নিরসনের জন্য দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটা কেন? টাকা কেন দিতে হবে? সরকারই তো তাদের টাকা দেয় যানজট মুক্ত রাখার জন্য। এটা তো এমপির দায়িত্ব না। সিটি মেয়র বলেছেন, ফুটপাতের মালিকানা সিটি করপোরেশন। এটা সত্য। আমি বলেছিলাম হকার বসলে সবখানে বসবে, না বসলে কোথাও বসবে না। এটা মানুষের পেটে লাথি মারার মত। আমি সমর্থন করতেও রাজি না, পুরো শহরকে অকেজো করতেও রাজি না। এর মাঝামাঝি একটি পন্থা বের করা দরকার, আর সেটা সিটি করপোরেশনের বের করা উচিৎ। আমরা সেখানে সহযোগিতা করবো।’
মতবিনিময় সভায় জাতীয় সংসদের হুইপ এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, এই মহতী সভায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আমার প্রিয়নেতা শামীম ওসমান। সম্পর্কে মামা। রাজনীতিতে তিনি অনন্য ব্যক্তিত্ব। অভিভাবক এমপি সেলিম ওসমান। তাঁরা ইচ্ছা করলেই নারায়ণগঞ্জে বড় কাজ হবে। রাজনীতিবিদরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেন এ কথা আজকে প্রমানীত। কল্যাণমুখি নারায়ণগঞ্জ গড়তে হলে আমাদের এই বৈঠকই যথেষ্ঠ। আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। মেয়র আইভীকে ধন্যবাদ জানাই। সবাইকে জানাই ঈদ শুভেচ্ছা।
সবশেষে মেয়র আইভী বলেন, ‘আজকে মতবিনিময় সভা হবে সেটা আমি জানতাম না। তাই এই ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। বড় ভাইয়েরা যেটা বলেছেন সেটাই শুধু কন্টিনিউ করে যাব ভবিষ্যতের জন্য। হকার সমস্যা সারাদেশেই রয়েছে এবং অনেক শহরে তা সমাধান হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন এগিয়ে আসলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। ঈদের পরে যদি বসতে চান আমি সেখানে চেষ্টা করবো আপনাদের বসানোর জন্য।
তিনি নারায়ণগঞ্জের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের জায়গার উপর রেলওয়ে কর্মচারীরা বিশাল মার্কেট বানাচ্ছে। এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু কেউ কিছু বলছিনা। একদিকে আমাদের শহরের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে রেলওয়ের সাবেক কর্মচারীরা মার্কেট বানাচ্ছে। সরকারিভাবে এখানে মাল্টিমোডাল হাব করার কথা, কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে মার্কেট বানানো হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সমস্যাগুলো যা আছে এগুলো সমাধান করা কঠিন কিছু না। শামীম ওসমান ভাইকে বললাম, ‘ভাই আপনি যদি বলেন কালকে কেউ বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসবে না। আপনি শুধু একবার দাঁড়িয়ে বলেন। পাঁচ মিনিটের সময় দিলে দুই মিনিটে পালিয়ে যাবে। যানজট নিরসন থেকে শুরু করে সবকিছু আপনার দ্বারা বাস্তবায়ন সম্ভব।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিশাল পরিবর্তন এসেছে ৩ ফেব্রুয়ারীর গোলটেবিল বৈঠকের পর। নারায়ণগঞ্জকে একটি পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত নগরী হিসেবে দেখতে পাই। শহরবাসী সাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছে। হকারের সমস্যাও অনেকটা সমাধানের পথে। এখন আমরা নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসমুক্ত, ইভটিজিংমুক্ত ও কিশোরমুক্ত দেখতে চাই।
মতবিনিময় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। তিনি বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠকে শহরের দুই এমপি ও মেয়র ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ করেছিলেন এই শহরে যানজট ও হকার সমস্যা থাকবেনা। আমরা এই কথার বাস্তবায়ন পাচ্ছি। শহরে একটা পরিবর্তন এসেছে। আজকের মতবিনিময় সভাটা হচ্ছে ফলোআপ। আজকের অনুষ্ঠানে ডিসি, এসপি আসতে পারেননি। আশাকরি আমাদের আজকের মতবিনিময় সভা সবার সহযোগীতায় সফল হবে। আমরা স্মার্ট নারায়ণগঞ্জ গড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছুতে পারবো।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা এর আগে সবাই একমঞ্চে বসেছিলাম শহরের মূল সমস্যা হকার ও যানজট নিরসন করতে। সম্মিলিতভাবে আমরা আমাদের নগরীর সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু সিদ্ধান্ত পেরেছিলাম। প্রশাসন সেই সিদ্ধান্তগুলো ফলো করছে। আজকে পুরনো সমস্যা অনেকটাই সমাধানের পথে।