‘স্বাধীন দেশে পরাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করছি’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার, নাগরিক অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকারসহ সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করে স্বাধীন দেশে পরাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করছি।
সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা ও মহানগর বিএনপি ওই সমাবেশের আয়োজন
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, আমরা কিছু বললেই ওবায়দুল কাদের লাফ দিয়া উঠে। তারা বলে ‘বিএনপি আওয়ামী লীগকে ভারতের সেবা দেশ বানানো চেষ্টা করছে’। এখনো সেটা হওয়া বাকি আছে? আজকে ওবায়দুল কাদের বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নাকি দৃষ্টতা। অথচ খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা যে কতটা অন্যায়, কতটা অবিচার, সময় আসলে বাবাধন টের পাইবা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটা মামলাও সঠিক না। এটা প্রতিবেশীদের খুশি করার জন্য। খালেদা জিয়ার অপরাধ, তিনি দেশবিরোধী চুক্তি করতে নারাজ, তিনি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে রাজি নন। খালেদা জিয়া বলেছে আমাদের প্রতিবেশী দেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নাই। আমরা প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই, কিন্তু তারা তো আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়না। তারা প্রভুত্ব করতে চায়। ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক,যেই দেশ বড় তারাই স্বামী। বন্ধুত্ব আর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তো এক না। আওয়ামী বলে চায়নাও নাকি আমাদের বন্ধু। যেভানে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আছে সেখানে চায়নার সাথে কি পরকিয়া।
তিনি বলেন, এই দেশে চোর, ডাকাত, পাচারকারী আর লুটপাটকারী সকলের আড়তদার। তাদের বিচার চেয়ে তো লাভ নাই। দুর্নীতি ছাড়া যাদের কোনো নীতি নাই, অথচ সরকার বলে, দুর্নীতিতে কোনো আপোস নাই। কিন্তু দুনীতি ছাড়া তাদের কোন নীতিই নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, নতুন কর্মসংস্থান নাই। আমদানি-রপ্তানি নিম্নগতি কিন্তু বিশাল একটা বাজেট করছেন। বাজেট আর প্রকল্প মানেই হচ্ছে চুরি। উন্নয়ন তো কোন দয়া না, কোন খয়রাত না। উন্নয়ন জনগনের অধিকার কারণ জনগণের টাকায় হয়। সেই উন্নয়নের নামে তারা টাকা লুটপাট করে খায়। স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা তো করোনার সময়ের চেয়েও খারাপ। যেদিকে তাকাবেন সব খাতেই চুরি আর ডাকাতি। শেখ হাসিনা এখন জনগণের নেত্রী না, তার জনগণ দরকার নাই।
বিএনপি এই নেতা বলেন, মুদি থাকলেই উনি (শেখ হাসিনা) এই দেশে থাকতে পারবে। আমাদের বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রেন যাবে আর আমরা কিছু বলতে পারবো না। এটা কার স্বার্থে করা হচ্ছে? ভারতের স্বার্থে। আমরা ভারত হয়ে নেপাল যাবো সেটার ট্রানজিট পাচ্ছি না। এটা হওয়ার পর কিছু আছে ঢিলা মারবো তারপর ইন্ডিয়া বলবো আমাদের নিরাপত্ত্বার অভাব। ভারতের আর্মি এখানে আইন্না বসায় দিবো, আর আমাদের আর্মি ঘরে বসে চিনা বাদাম খাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে মানুষকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। প্রতিবেশী দেশের সাথে স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি নিয়ে কিছু বললেই আমাদের বলে আমরা নাকি ভারত-বিদ্বেষী। একটা চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগকে ভারতের সেবাদাস বানানোর চক্রান্ত চলছে।
ভারতকে করিডোর দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশ স্বাধীন করতে লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আমরা পাকিস্তানের অত্যাচার ও অর্থনৈতিক বিষম্য মানতে পারলাম না কিন্তু এখন আমরা দিল্লীর গোলামি করি। এই আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দিতে না পারলে বাংলাদেশ নামে দেশটির নাম মানচিত্রে থাকবে না। ভারতের পরিকল্পনা অনেক বড়। তারা সেই ৬ হাজার বছরের পুরনো মহাভারতে ফিরে যেতে চায়। ভারত অন্য কোন দেশের অস্তিত শিকার করতে চায় না।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও বেনজির আহম্মেদ টিটো।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামন মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, আব্দুল মান্নান প্রমুখ।