শুভ বড় দিন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধু পৌলের গীর্জা ও চারারগোপের ব্যাপিষ্ট চার্জে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও যুব ঐক্য পরিষদ।
এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ শুভ বড়দিন। আজ থেকে দুই সহস্রাধিক বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। ৩৩ বছরের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তিনি মানুষকে শুনিয়েছেন শান্তির বাণী, ভালোবাসার কথা। হিংসা-দ্বেষ, পাপ-পংকিলতা থেকে মানুষকে মুক্ত করাও ছিল তার প্রবর্তিত ধর্মের অন্যতম মূল কথা। তার শান্তির বাণী শাশ্বত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। মতবাদ প্রচারের সময় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন যিশু কিন্তু কোনো নির্যাতন-নিপীড়নই তাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মানুষকে জয় করার হাতিয়ার ছিল তার সংযম ও সহিষ্ণুতা। বর্তমান যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘাতময় এ পৃথিবীতে যিশুর বাণী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যিশু বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের শক্তিতে। বাইবেলে বর্ণিত আছে- ‘আমি সব মন্দ আত্মাকে তাড়াই ঈশ্বরের শক্তিতে এবং তোমরা যা আমার কাছ থেকে শোনো তা আমার নয় বরং সেসব কথা পিতার, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। ’বর্তমান বিশ্বের হিংসা ও পারস্পরিক অশ্রদ্ধাবোধ প্রকৃত অর্থে আত্মারই সংকট। মন্দ আত্মা মানুষকে তাড়িয়ে ফিরছে নেতিবাচকতার দিকে। মানুষের মধ্যে যিশু প্রস্তাবিত পরিশুদ্ধ আত্মার প্রতিস্থাপন ছাড়া এ সংকট থেকে মুক্তির উপায় নেই। যিশু সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ দেয়ার কথাও শুনিয়েছেন। আধুনিক গণতন্ত্রের মর্মকথাও তা-ই। সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জীবন ও দর্শনেই যিশুর প্রভাব পড়েনি, পুরো মানবসভ্যতাই কিছু না কিছু মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে তার আদর্শ, নীতি ও বিশ্বাস দ্বারা।
প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বের খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও নারায়ণগঞ্জের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও ধর্মীয় অনুভূতির পরম মমতায় আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন করে থাকে। দিনটি উপলক্ষে যিশুখ্রিস্টের জন্মের কাহিনী পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনী অবলম্বনে গির্জাঘরে, এমনকি প্রত্যেক বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়।এর সঙ্গে গান-বাজনা, নাম-সংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস ইত্যাদি চলে। এসব বাহ্যিক উৎসব-আয়োজনের ঊর্ধ্বে খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা তাদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন। এ সময়ে খ্রিস্টভক্তরা ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্কের উন্নয়ন ও নবায়ন করতে সচেষ্ট হন।
বড়দিনের উৎসবে দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিয়ে থাকে এবং আনন্দ ভাগ করে নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নেতৃবৃন্দ এ শুভ দিনে প্রভুর নিকট দেশের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।
তাছাড়া নেতৃবৃন্দ বড়দিন উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সহ সভাপতি পিন্টু পলিকাপ পিউরিফিকেশন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, সহ সভাপতি আগষ্টিন বিমল গোলদার, বিপ্লব ঘোষ মনা, সাংগঠনিক সম্পাদক অরুন দেবনাথ, সহ সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার সাহা, অজয় সূত্রধর, জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, জেলা ঐক্য পরিষদের কোষাধ্যক্ষ পিন্টু রায়, অসিম বড়ুয়া, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুব বিষয়ক সম্পাদক সুব্রত সাহা, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহিলা সম্পাদিকা মমতা কর্মকার, রত্না কর্মকার,মহানগরের নেতা স্বর্ণা সূত্রধর,কৃষ্ণ পদ মজুমদার, অজয় বিশ্বাস রিপন,জয়ন্ত কুমার পিংকু, নরেন শিকদার,ডাঃ জীবন সাহা,কিশোর দাস,বিপ্লব বাড়ৈ,গৌতম দত্ত,জীবন সাহা,সত্যরঞ্জন দেবনাথ,কিশোর দাস,প্রবাস চন্দ্র বিশ্বাস, শংকর সাহা,শংকর চন্দ্র দে,সোনারগাঁ উপজেলা ঐক্য পরিষদের সহ সভাপতি গৌতম বনিক,সাধারণ সম্পাদক সহদেব দাস শিশির,বন্দর যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি তুলশী ঘোষ, ১৪ নং ওয়ার্ড ঐক্য পরিষদের সভাপতি পংকজ রায়, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত দাস,ভুবন বর্মনসহ নেতৃবৃন্দ।