রমজান উপলক্ষে সরকার থেকে ডাল, মুরগি, মাছ, মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি খুলনার বাজারে। রমজানের শুরুতে যে দামে পণ্যগুলো বাজারে বিক্রি হয়েছে সেই দামেই এখনও বিক্রি হচ্ছে। এমনকি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর দাম বেড়েছে দু’একটি পণ্যের। ফলে বাজারে গিয়ে কিছুটা হোচট খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শনিবার (১৬ মার্চ) খুলনার একাধিক বাজার ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে ডাল, মাছ, মুরগিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই তালিকায় মুগ ডাল পাইকারি পর্যায়ে ১৫৮ টাকা ৫৭ পয়সা, যা খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৫ টাকা ৪১ পয়সা, আমদানিকৃত ছোলার খুচরা মূল্য ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা, খেসারির ডাল ৯২ টাকা ৬১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ডালের দাম মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে নগরীর ময়লাপোতাসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায় খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি গরুর মাংসের দাম ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায়, ছাগলের মাংস এক হাজার তিন টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ১১শ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সার স্থলে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে ৪০ টাকা হালি থাকলেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের দাম ১০ টাকা ৪৯ পয়সা নির্ধারণ করায় এখন তা ৪৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সরকার যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা কোনো কাজে আসেনি। আগের দামেই সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, মাছ মুরগি ছাড়া আর প্রায় সব পণ্যই আগে থেকে কিনে রাখা। ফলে সেই দাম অনুযায়ী বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই আগের পণ্য শেষ না হলে দাম কমানো সম্ভব নয়।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, সরকার নির্ধারণ করে দিলেও পাইকারি পর্যায়ে যদি দাম না কমে তাহলে খুচরা পর্যায়ে দাম কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ লোকসান দিয়ে কেউ পণ্য বিক্রি করবে না।
অন্যদিকে নগরীর জোড়াকল বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার কাতলা মাছের দাম নির্ধারণ করেছে ৩৫৩ টাকা। কিন্তু বাজারে আগে থেকেই এই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। তবে চাষের পাঙাস ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও তা ২০০ টাকার নিচে পাওয়া দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বাজারের একাধিক মাছ বিক্রেতা জানান, তেলাপিয়া আর পাঙাস মাছ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। কারণ এই দুটি মাছের দাম কম। কিন্তু সরকার যে দাম দিয়েছে সেই দামে মাছ পাওয়া যায়নি গত দুইদিনে। ফলে দাম কমানো যায়নি।
ওই বাজারে মাছ কিনতে আসা গৃহবধূ সাফিয়া বেগম বলেন, গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাস আর তেলাপিয়া। সরকার এই পাঙাসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে কোনো মাছ বিক্রেতার কাছে পাঙাস মাছ পাওয়া যায়নি।
মাছ, ডিমের মতো বাজারের সবচেয়ে আলোচিত পণ্য হিসেবে পরিচিত পেঁয়াজের দামও রয়েছে আগের মতই। গত ১৫ মার্চ পেঁয়াজের দাম বেধে দেওয়া হয়েছে দেশি পেঁয়াজ ৬৫টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু এই দামে কোনো ব্যবসায়ীর কাছে পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। একশ টাকার নিচে বাজারে কোনো দেশি পেঁয়াজ শনিবারও বিক্রি হয়নি।
অন্যদিকে বাজারে এখনও শীতকালীন সবজির সরবরাহ থাকায় প্রায় সব ধরনের সবজি রয়েছে ক্রেতার নাগালের মধ্যে।
জোড়াকল বাজারের সবজি বিক্রেতা রানা জানান, বাজারে এখন ঢেড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, মিস্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কুশি ৪০ টাকা, বিটকপি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।
এসব পণ্য ছাড়াও দেশি রসুন ১২০ টাকা ৮১ পয়সা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছে সরকার।