ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবল নারায়ণগঞ্জের নগরী। টানা বৃষ্টির কারণে ডুবে যায় পুরো নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক সহ এর আশেপাশের আরও বেশ কিছু সড়ক। শুধু তাই নয়, ঝড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। রাত অবধি বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে বৃষ্টি। সঙ্গে দমকা হওয়া। তুমুল এই বৃষ্টিতে মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কর্মজীবী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হয়েই পড়েন বিপাকে। সকাল থেকে ছিল অন্তহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তি। সড়কে গাড়ির সংখ্যাও কমে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রিকশা-অটোরিকশা বা গণপরিবহণের সাক্ষাৎ মেলে।
ফলে পরিবহণ সংকটে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। যানবাহনের তীব্র সংকটের সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও রিকশার ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণ, কোথাও তিনগুণ। যারা দিনের বেলা বাইরে এক-দুবেলা খাবার খান, তারাও পড়েন বিপাকে। অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলা ছিল, তাতে একদিকে যেমন ভিড় লেগে ছিল, তেমনি দামও নিয়েছে অন্যদিনের চেয়ে বেশি। কাঁচাবাজারেও জিনিসপত্রের দাম বেশি রাখার খবর পাওয়া গেছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে নগরীর চাষাঢ়া, কলেজ রোড, জামতলা, মাসদাইর, গলাচিপা, ভূঁইয়ারবাগ, দেওভোগ দাতা সড়ক, দেওভোগ পানির টাংকি, নন্দীপাড়া, উকিলপাড়া, আমলাপাড়া, কালির বাজার, দেওভোগ পাক্কা রোড, খানপুর,
মিশনপাড়া, খানপুর বউ বাজার, গোয়ালপাড়াসহ নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের বিভিন্ন জায়গা ও প্রেস ক্লাবের সাথে ভাষা সৈনিক সড়কে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করে। বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক অচলও হয়ে পড়ে। এসব জলাবদ্ধতার সঙ্গে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে যায়।
অফিসে যাচ্ছিলেন আল মেহেদী, তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সকালে সেই মোহাম্মদপুর থেকে এসেছি কর্মস্থলে। গাড়ি থেকে নামার কোন রিক্সা পাচ্ছি না। যেটা পাই সেটাও ভাড়া অতিরিক্ত চায়।
২নং রেলগেট থেকে চাষাঢ়া যাচ্ছিলিনে এক নারী। সে জানায়, সব সময় মিশুক ভাড়া ১০টাকা নেয় ২নং গেট থেকে চাষাঢ়া। কিন্তু এই দুর্ভোগের অবস্থায় ভাড়া বাড়ায় দিছে। ১০টাকার ভাড়া ২০টাকা করে দিয়েছে। এসব দেখার জন্য কোন প্রশাসন বা কোন সংস্থাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই হলো আমাদের জীবন।
গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা জোনায়েদ জানান, গলাচিপা থেকে উকিলপাড়া সব সময় ২০-৩০টাকায় যাই। আজকে রাস্তায় পানি থাকায় সেই ভাড়া ৭০-৮০টাকায় চলে আসছে।
অন্যদিকে এতো ভাড়া বেশী নেয়ার বিষয়ে রিক্সা চালকরা জানায়, রাস্তায় পানির জমাট হওয়া আমাদের রিক্সার প্যাডেল চালাতে ডাবল খাটনি খাটতে হয়। বেশী পরিশ্রমের জন্য বেশী ভাড়া নিতে হয়। পানি কমে গেলে আবার ভাড়া আগের মতো নিবো।
ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসের কারণে নারায়ণগঞ্জে কিছু এলাকায় গাছও ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরের চাষাঢ়ায় একটা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে বিদ্যুতের তারে পড়ে আগুন লেগে যায়। এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে নারায়ণগঞ্জে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। প্রধান নির্বাহী কর্মকতা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ও অন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্মতারা কল রিসিভ করেনি।