‘আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক দল প্রায় পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায়। এ সরকারের আমলেও আমরা ভালো নেই। আমরা জানি, জাতির ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আত্মত্যাগ করেছিলাম। এ আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এ স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আজকে আমরা বলতে চাই, আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশের সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকার। রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ ও প্রশাসনে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ আজকে বাংলাদেশকে খামচে ধরেছে। এ খামচে ধরার পেছনে কারণটি হলো, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু সরকারকে ক্ষমতাচুত্য করে সামরিক বেসামরিক লেবাসধারী যারা রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দখল করেছে এবং আসিন ছিলো একুশ বছর। তারা বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিনত করেছে। ধর্মীয় নিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয় মৌলবিধিকে পরিবর্তন করে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে বিভাজন করেছে। ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করার মধ্যদিয়ে তারা শুধু ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতির মধ্যে বিভাজন আনেনি, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে তৃণমূলে তারা নিয়ে গেছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে শহরের পুরান কোর্ট সংলগ্ন সরকারি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারের এ পনেরো বছরের মধ্যে আমরা যা আশা করেছিলাম, তা কিন্তু হয়নি। বাংলাদেশ আজও ওই বিঘিœত পাকিস্তানি ধারায় যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধারায় এদেশে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। তারা বারংবার চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরে মৌলবাদি শক্তি, ১৯৭৫ সালে যে শক্তির আধার ছিলো খন্দকার মোস্তাক, সেই একই খন্দকার মোস্তাকের দল ভিতর থেকে যেমন খামচে ধরেছে। আবার অন্যদিকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি এ সরকারের নানান জায়গায় আপসের রাজনীতিতে এগিয়ে চলেছে বলেই তারা অধিকতর উৎসাহিত হয়ে আজকে তারা চারিদিকেই ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যদিয়ে আজকে আমরা কর্মী সম্মেলন করছি।
র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্যাতন নিপীড়ন চলছে, ভূমি দখল চলছে। সরকারী দলের আইজিপি বেনজীর, তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। গোপালগঞ্জে গাজীপুরে প্রায় ৭শ বিঘা সংখ্যালঘুদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। গোপালগঞ্জের ওই যে রির্সোট সাড়ে ৬শ বিঘা জমি দখল করলো বেনজীর। আমরা সেখানে গিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা সংখ্যালঘুদের চোঁখের জল দেখেছি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলো, এই যে বেনজীর হাতে জমিগুলো চলে গেলো, এটাকে আপনারা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন? আমাদের কথা একটাই, যারা সংখ্যালঘুদের ভূমি দখল করছে, দেবত্তোর ভূমি দখল করছে, যারা শশ্মান দখল করছে, এরা সরকারি দলের পদপুষ্ট। প্রশ্ন করা হয়েছিলো, এখন এ সম্পত্তিগুলো কি করা যায়? আমরা বলেছিলাম, বেনজীর যেসকল সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে এ সম্পত্তিগুলো কেড়ে নিয়েছিলেন, তাদেরকে তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া হোক।
এর আগে সকাল ৯টায় কর্মীসম্মেলন উপলক্ষে জেলা ও মহানগর ঐক্যপরিষদের উদ্যোগে শহরে র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট সংলগ্ন সরকারি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দরা জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রমাকান্ত সরকার, লোকনাথ দত্ত, রিচার্ড সৌরভ দেউরী, নিমাই চন্দ্র দে, পিন্টু রায় ও তপন ঘোষকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাসের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সহ সভাপতি ননী গোপাল সাহা, সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, সোনারগাঁ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সহদেব দাস শিশির, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রমাকান্ত সরকার,সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল শর্মা, বন্দর উপজেলার সভাপতি হরি সাহা, আড়াইহাজার উপজেলার সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, জেলার সহ সভাপতি পিন্টু পলিকাপ পিউরিফিকেশন, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ভজন চন্দ্র দাস ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রিপন কর্মকার।
জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি আনন্দ কুমার সেরাওগী সুমন ও মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক অশোক সরকার, জেলার নেতা রতন মন্ডল, কিশোর দাস, অর্জুন দাস, গোবিন্দ দাস, মহানগরের সহ সভাপতি বিকাশ সাহা,আগষ্টিন গোলদার,বিপ্লব ঘোষ মনা, বিশ্বজিৎ সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অরুন দেবনাথ, বিপ্লব কুন্ডু, সুমন সাহা, সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি লোকনাথ দত্ত, বন্দর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সুজন দাস, আড়াইহাজারের সাধারণ সম্পাদক দুলাল রায়, জেলার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন সরকার, কোষাধ্যক্ষ পিন্টু রায়, মহানগরের সহ সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার সাহা, অজয় সুত্রধর, সুব্রত সাহা, ১৪ নং ওয়ার্ড ঐক্য পরিষদের সভাপতি পংকজ রায়,সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত দাস, মহানগরের নেতা জীবন সাহা, গৌতম দত্ত, জয়ন্ত সাহা পিংকু, কৃষ্ণপদ মজুমদার, প্রবাস চন্দ্র সাহা, বিপ্লব বাড়ৈ, কিশোর দাস, অজয় বিশ্বাস রিপন, ১৫নং সভাপতি ভোলানাথ পোদ্দার, সত্যরঞ্জন দেবনাথ, হিরন দাস, সুনীল দাস, হরিপদ পাল, ১০নং ওয়ার্ড ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমাই চন্দ্র চন্দ, সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ রায়, ১১ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক খোকন বিশ্বাস, বিপুল পোদ্দার, শংকর দে, সুমন ঘোষ,সজল রাজবংশী, বন্দর যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি তুলশী ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক জিতু দাস, সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র ভৌমিক, সদর উপজেলার সভাপতি সুমন ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মন্ডল শান্ত, আড়াইহাজারের সভাপতি সুকান্ত ভৌমিক অটল, মহানগর যুব ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন দত্ত বিল্লু, জ্যাকি নন্দী, সজীব ঘোষ, প্রণয় সিংহ, অমিত আচার্য্য, গোপাল রায়, রাজিব দাস, কিশোর দাস, রবি দাস, মিলন বিশ্বাস হৃদয়, শংকর চন্দ্র সাহা প্রমূখ।