ঢাকায় হরিজন সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেছেন, সারাদেশে প্রায় ১৫ লক্ষ হরিজন সম্প্রদায়ের লোক আছে। তাদের কখনোই নিজস্ব কোন বাসস্থান ছিলনা। তারা বরাবরই সরকারী জায়গায় বসবাস করে থাকে, কেউ কখনো তাদের উচ্ছেদ করেনি। কিন্তু গত দুদিন আগে ঢাকার বংশালে মিরনজিল্লা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকায় হরিজন সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বংশালের কাউন্সিলরের বহিস্কার দাবি জানিয়ে শিখন সরকার শিপন বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিলো বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা না করে যেনো তাদেরকে উচ্ছেদ করা না হয়, কিন্তু উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা অমান্য করে কিভাবে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। আমরা এই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বংশালের কাউন্সিলরের বহিস্কার দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ এই প্রতিপাদ্যকে বুকে ধারন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এবং বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কণ্যা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাই যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তখন স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী অপশক্তি এই উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ঢাকার বংশালে মিরনজিল্লা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বক্তব্য শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সভাপতির বক্তব্যের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুশিল দাসের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ডোম সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ঈশ্বর লাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি অমৃত লাল, সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ সিং, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি তিলোত্তমা দাস, বাদল দাস, অর্থ সম্পাদক গনেশ সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক অভিরাজ সেন সজল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন রুদ্র, প্রচার সম্পাদক তপন গোপ সাধু, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি হিমাদ্রি সাহা হিমু, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণা আচার্য্য, সোনারগাঁ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদিপ ভৌমিক, ফতুল্লা থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রদিপ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক শিবু দাস, যুগ্ম সম্পাদক বীরেন দাস, বন্দর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদেও যুগ্ম সম্পাদক ভোলানাথ সাহা, গৌতম সাহা, মুসাপুর ইউনিয়ন সভাপতি দিলিপ দাস, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদেও সভাপতি বিশ্বজিত ঘোষ, বারদী ইউনিয়ন পূজা পরিষদেও সাধারণ সম্পাদক রিপন শীল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হরিজন ঐক্য পরিষদেও সভাপতি রঞ্জন বেগি, ফতুল্লা থানা হরিজন ঐক্য পরিষদেও সভাপতি স্বপন ডোম, টানবাজার হরিজন কলোনী নেতা কািমাল লাল, মাসুম লালম রুবেল লাল প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জুলাই বিনা নোটিশে রাজধানীর বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। ফলে বাস্তুহারা হয়ে যায় কলোনির প্রায় ৫০টিরও বেশি পরিবার। উচ্ছেদ অভিযানের সময় মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে ৩৩ নম্বর কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১৬ জন আহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে মিলনজিল্লা এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।