নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজবাড়ীর বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একই প্রজ্ঞাপনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুলতানা আক্তারকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক এবং অর্থ বিভাগের উপ-সচিব এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
রাজবাড়ী জেলায় যোগ দিয়েই দ্রুতই জনবান্ধব ডিসি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন জাহিদুল ইসলাম। ডিসি জাহিদুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের একান্ত আস্থার ঠিকানা। তাদের সবার শেষ ভরসার স্থল হয়ে উঠেছিলেন এই জেলা প্রশাসক। রাজবাড়ী জেলার শহীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন যোগ দেওয়ার দুই দিনের মাথায়। আহতদের তার অফিসে ডেকেও তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেন।
মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত পাওয়া ডিসি জাহিদুল ইসলাম দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাতে নিজে গিয়ে উপহার দেন শীতের কম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার পেঁয়াজ চাষিদের পাশে দাঁড়ান অতি দ্রুততার সঙ্গে। রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন জনবান্ধব এই কর্মকর্তা।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় দৌলতদিয়া এলাকায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লীর শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেও সবার নজড় কাড়েন। সেভ দ্য চিলড্রেনের অর্থায়নে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) নামের একটি বেসরকারি এনজিও পরিচালিত স্কুলের কার্যক্রম ডিসেম্বর মাসে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দাতা সংস্থা। যৌনপল্লীর শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেন সদা তৎপর এই সরকারি কর্মকর্তা।
জাহিদুল ইসলাম ১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ চাঁদ মিঞা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম হচ্ছেন সবচেয়ে বড়।
ছাত্রজীবন থেকেই মেধার পরিচয় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগ কৃতিত্বের সঙ্গে রাশিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৃত্তির আওতায় আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কৃতিত্বের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে লালমনিরহাট জেলায় যোগদান করেন। জেলার এনডিসি হিসেবে দীর্ঘ সময় লালমনিরহাট ও পরে নীলফামারী জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ও মৌলভীবাজারের সদরে উপজেলায়ও দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে এবং নোয়াখালী জেলার চাটখিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মদক্ষতার পুরস্কার হিসেবে কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন ২০১৫ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হন। পরে ১ বছরের জন্য শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাজ্যে গমন করেন।