অবশেষে অভিমান ভুলে একমঞ্চে বসলেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ফতুল্লার হাজীগঞ্জ এলাকায় ওলামা মাশায়েখ ও তাবলিগের সাথীদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে এক মঞ্চে দেখা যায় তাদের।
এদিকে তাদের এক মঞ্চে দেখে কৌতুহলের সৃষ্টি হয় উপস্থিত মুসল্লিদেরমাঝে। উপস্থিত মুসল্লিরা এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভারতের এজেন্টরা আমাদের নিজেদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করেছিলো, আজকে দুই খ্যাতিমান মাওলানাদের একসাথে মনে হচ্ছে সেই ষড়যন্ত্র বুঝি টিকলো না। এখান থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন ইসলামের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলাম আছি এবং থাকবো।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, টঙ্গীর ময়দানে সাদ পন্থিদের ইজতেমা হতে দেওয়া হবে না। তাদের ইজতেমা অনুমতি দিলে সেটা প্রতিহত করতে সারাদেশের লাখো তৌহিদী জনতা কাফনের কাপড় মাথায় দিয়ে লংমার্চ করবে।
তিনি আরও বলেন, মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি নতুন এসেছেন। তাদের জেলার ম্যান্ডেট বুঝতে হবে। তৌহিদী জনতা কোনোদিন অন্যায়কারীদের ছাড় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দিবে না। এখানে কোনো ধরনের আস্তানা করার চেষ্টা করলে মাটিসহ উৎখাত করা হবে।
এদিকে একই মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, আমরা একটা বোকামি করতেছি ওদের আগে মার্কায বানাইতে দিতাম। ওরা বানাইতো কিন্তু আইতো কেমনে? আমি নারায়ণগঞ্জের এসপি ডিসিকে জানাইয়া দিতে চাই আপনারা বহু তালবাহানা আমাদের সঙ্গে করেছেন। আমার ভাইদের লাশের বন্যা কিন্তু আপনাদের সাথে নেই। আগামী দিনে আমরা রাজপথে থেকে এসপিকে অনুরোধ করবো না, ডিসিকে অনুরোধ করবো না, আমরাই ফয়সালা করবো নারায়ণগঞ্জের কি হবে? আমার ভাইদের রক্তের দাম আপনারা দিতে পারবেন না। পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের যারা খুনি এদেরকে যদি এ্যারেষ্ট করা না হয় এসপি ডিসি অফিস ঘেরাও করা হবে। আমরা হাজীগঞ্জে তাদের আস্তানা দেখতে চাই না।
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মহানগর হেফাজতের সাবেক সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের সাথে মনস্তাত্বিক যুদ্ধ চলছিলো অনেকদিন ধরেই। গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ যুদ্ধ গড়ায় মাঠে ময়দানে। ওই দিন দুপুরে শহরের ডিআইটি কেন্দ্রীয় রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে ভারতে মহানবীকে নিয়ে কুটক্তির প্রতিবাদে জেলা ও মহানগর হেফাজতে ইসলাম মিছিলকে কেন্দ্র করে মহানগর হেফাজতের সদ্য সাবেক সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে পন্ড হয়ে যায় মিছিল।
জানাগেছে, কমিটি ঘোষণার পূর্বে বেশ কিছুদিন ধরে হেফাজতের কমিটি নিয়ে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মাওলানা ফেরদাউসের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। দুটি কমিটি নতুন করে পুর্নগঠনের উদ্যোগ নিলে মহানগরের সদ্য সাবেক সভাপতি ফেদাউসুর রহমান ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ আপত্তি জানান। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সভাও করেন তারা। ২৮ সেপ্টেম্বর মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য চলাকালে মহানগর হেফাজতের নতুন কমিটির বিষয়টি উঠে এলে সেখানে হৈচৈ শুরু করে দুজনের অনুসারীরা। একটা সময় তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে মাইক কেড়ে নেন এবং ভাঙচুর চালান। মিনিট দশেক মত চলে সেই হৈচৈ ও হাতাহাতি। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা বার বার অনুরোধ করার পর বিশৃঙ্খলা বন্ধ হয়। হারুন অর রশিদ মাওলানা আব্দুল আউয়ালের অনুসারী বলে জানাগেছে।