পাঁচ আগস্টের পর সারা নারায়ণগঞ্জে ভাঙচুর, লুটপাট ও সংঘাতময় ঘটনায় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ীঘরে হামলা ও হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীঘরে হামলাসহ বিভিন্নস্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসব ভাঙচুরের একটিতেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।
সর্বশেষ ০৬ ফেব্রয়ারী (বৃহস্পতিবার) রাতে চাষাঢ়ায় সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের দাদার বাড়ী আওয়ামী লীগের জন্মস্থান খ্যাত বাইতুল আমান ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এদিনও একেবারেই অনুপস্থিতি দেখা যায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের। তবে বাইতুল আমান ভাঙার শুরু থেকেই মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিলো চোঁখে পড়ার মতো। ফ্যাসিস্টদের এসব অবকাঠামো ভাঙার সময় কেন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকছেন না, তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা কৌতুহল। জনগণের এসব কৌতুহল দূর করতে এ বিষয় নিয়ে কথা হয় ইসলামী দলগুলোর নেতাদের সাথে।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কার্যনির্বাহী কমিটির সুন্নি সদস্য ও মহানগরীর সাবেক আমির মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলাম কোন বে-আইনী কাজে, কোন বিশৃঙ্খল কাজে কখনই শরিক ছিলো না, এটা পছন্দও করে না, এটা করবেও না, থাকবেও না কখনোই। জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই কল্যানমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ম মাফিক কাজ করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা সকলে মনেকরি কাউকেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া উচিৎ না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব হলো প্রশাসনের। আমি গতকালও বলেছি, যদি কেউ ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলা করতে চায় তাদের (প্রশাসন) দায়িত্ব হলো প্রতিহত করা। কিন্তু এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা নিয়োজিত তারা ব্যত্যয় হয়েছেন, এটা স্বীকার করতেই হবে।
একই বিষয়ে জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ইসলাম ভাঙচুর পছন্দ করে না, সমর্থন করে না। আমরা ইসলামের রাজনীতি করি, এ জন্য আমরা এটাকে সমর্থন করি না। যদি কেউ অপরাধ করে আইন আছে, শাস্তি আছে। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটা, এটা আমাদের দল সমুচিন মনে করে না।
তিনি বলেন, এই যে ক্ষোভ ভাঙচুরটা হলো, এটার জন্যতো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাই দায়ি। পাশ্ববর্তী রাস্ট্রে বসে সে যে ধরনের উস্কানি দিচ্ছে, এ ভাঙচুর তার ওই বক্তব্যেরই প্রতিফলন। আমরা ইতোমধ্যে এ সরকারের কাছে দাবি জানাইছি, ওনারা যেন অনতিলম্বে কূটনৈতিকভাবে ভারতকে প্রেশার ক্রিয়েট করে তাদের রাস্ট্রে বসে একজন পলাতক ফ্যাসিস্ট দেশের বিরুদ্ধে এভাবে ষড়যন্ত্র করছে, এটা যেন না করে।
মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান আরও বলেন, ভাঙচুরের পর প্রশাসন, রাজনৈতিক দল সবাই কিন্তু স্টেটমেন্ট দিছে সবাই বলছে ভাঙচুরগুলো সমুচিন হচ্ছেনা, এটা থেকে ফিরে আসা উচিৎ। ড. ইউনুস সাহেব নিজেও বলছে, ভাঙচুরের সাথে যেন কেউ সংযোগ না হয়। দেশী বিদেশী বহু ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এখন কে যে কোনদিক থেকে ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় এজন্য চোঁখ কান খোলা রেখে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা যেনে থাকবেন গতকাল যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে একটি বিশেষ অভিযান চালু করেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান কিন্তু এ ভাঙচুর যেন না হয়, সেই ঘটনারই প্রতিফলন। আশাকরি, এটা যদি অব্যাহত থাকে এবং কঠোর হস্তে যদি দমন করে এগুলো নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া আরেকটি বিষয়, প্রশাসনের মধ্যে আমলাদের মধ্যে এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারে পেতাত্মারা বসে আছে। তারাতো চাইবেই দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। যখন হত্যা মামলার আসামীরা নির্দায় ঘুরে বেড়ায়, কেউ এ্যারেষ্ট হচ্ছে না। নির্বিঘেœ ঘরে ঘুমায়, চলাফেরা করছে এ জন্যই মূলত যৌথ বাহিনীর অভিযান। আশাকরি, এ অভিযানে কিছুটা দমন হবে।
‘ইসলাম ভাঙচুরে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে’ ইসলামী আন্দোলন মহানগরীর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ্ এ বিষয়ে বলেন, আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামী আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করি। ইসলাম মানে শান্তি, ইসলাম ভাঙচুরে বিশ্বাস করে না। ইসলাম প্রতিহিংসা পরিহার করে শান্তি চায়। এ জন্য আমরা খারাপটা বলে যাবো, মানুষকে বুঝিয়ে যাবো। কিন্তু কাউকে আঘাত দিয়ে নয়। আমাদের হলো এ নীতি। মানুষের কল্যানে আমাদের রাজনীতি।
তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে প্রতিবাদ করেছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গা হয়েছে, এগুলো হলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয় সম্পদতো আমরা ভাঙতে পারি না। আর ব্যক্তিগত সম্পদ যাদের ছিলো, এগুলো রাষ্ট্র দেখবে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেবো কেন? আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, যারা ভাঙচুর করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলবো এগুলোতো দলীয় পক্ষ থেকে করছেনা। কিছু লোক করছে। এঁরা অতি উৎসাহী কিংবা নাইমলাইনে আসার জন্য এসব করে থাকতে পারে। এগুলো ভালো নয়। আমরা এগুলো বিশ্বাস করি না।
মাসুম বিল্লাহ্ দাবি করে বলেন, এটা হতে পারে পতিত স্বৈরাচারের একটা উস্কানি। বাকি অনেক কিছুই মিডিয়ার সামনে বলা যায় না। তবে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো, আপনারা তৎপর হন। আইনশৃঙ্খলা তৎপর হলে এ ভাঙচুর অনেকাংশে রোধ করা যাবে।