গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ পুনরায় মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত এই দলটি, হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ফের ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এর পাশাপাশি, গোপনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া এবং সোস্যাল মিডিয়ায় অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত স্ট্যাটার্স দেয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। শুরুর দিকে মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা কম থাকলেও, তা ক্রমেই বাড়ছে।
জানাগেছে, চলতি সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জে অন্তত ২ ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। আরও একটি মিছিলের প্রস্তুতির সময় পুলিশ আওয়ামী লীগের ৭ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জে প্রথম ঝটিকা মিছিলটি হয় আড়াইহাজারে।
গত ২৯ এপ্রিল আড়াইহাজারের খাককান্দা ইউনিয়নে কৃষকলীগের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিলটি বের করা হয়। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মোল্লার সমর্থকরা এ মিছিলটি বের করে বলে জানাগেছে।
এদিকে সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে সোনারগাঁওয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক ঝটিকা মিছিল করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে এ মিছিলের ভিডিওটি ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে প্রচার করা হয়। ভিডিওতে মিছিলে থাকা নেতাকর্মীদের ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
একই দিন ভোরে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় আরও একটি মিছিল করার প্রস্তুতি নেয় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। তবে মিছিল করার আগেই পুলিশ আওয়ামী লীগের ৭ জন কর্মী সমর্থকরা গ্রেফতার করে।
এদিকে আওয়ামী লীগের এভাবে সক্রিয় হওয়া এবং রাজপথে মিছিল করার কারণে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন রাজনীতিতে তৃতীয় বিকল্প শক্তি ঠেকানোর জন্য কিছু রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগকে সাহায্য করছে। এমনকি, আওয়ামী লীগকে সংসদে বিরোধী দল বানানোর জন্যও গভীর চক্রান্ত চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সতর্ক না হলে আওয়ামী লীগের এ ধরনের অপতৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর তারা পুরোনো চেহারায় ফিরে আসবে। যার ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অশান্ত হতে পারে। বিশ্লেষকরা জানান, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতায় এলেও একের পর এক ষড়যন্ত্র করে আগামী সরকারের ভবিষ্যৎকে বিপর্যস্ত করতে চেষ্টা করবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ভারতের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ পুনরায় মাঠে নামতে সক্ষম হয়েছে। দেশি-বিদেশি শক্তি তাদেরকে সাহস ও শক্তি প্রদান করছে, এবং এর মাধ্যমে তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে কোন অবস্থাতেই মিটিং-মিছিল না করতে পাড়ে সেজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়েছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ২০ এপ্রিল দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে তার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে গুপ্ত ও চোরা মিছিল করছে। আমি মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জ মহানগরে এই ফ্যাসিস্টের দোসররা কোথায় যেন কোন গুপ্ত চোরা মিছিল ও পিকেটিং করতে না পারে। আপনারা যার যার ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে সচেতন থাকবেন। যেখানেই এ ধরনের মিছিল হবে সেখানে শুধু পিট্টি আর পিট্টি। কোন কথা হবে না। তাদের যেকোন ভাবে হোক দমন করতে হবে।
ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবারও এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনার জন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সচেষ্ট থাকবেন। তাদেরকে পিট্টি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।